ndm
04 Jun
কালো টাকা বৈধের সুযোগ জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চেতনা পরিপন্থী

অর্থ উপদেষ্টা ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য যে বাজেট প্রস্তাব করেছেন সেটি ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামে থাকা রাজনৈতিক এবং সামাজিক শক্তিগুলোর প্রত্যাশাকে পূরণ করে নাই। দাতা সংস্থার প্রেসক্রিপশনের এই বাজেট সর্বোচ্চ করহার আগের মতো ৩০ শতাংশ রাখা হলেও আগের ধাপগুলোর সীমা কমিয়ে আনায় গত বছরের সমান আয় করেও বেশি হারে কর দিতে হবে অনেক করদাতাকে। এটি পরিষ্কার বৈষম্য বলে মন্তব্য করেছেন এনডিএম সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার শাহেদুল আজম।

 

তিনি বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে কালো টাকাকে সাদা করার যে সুযোগ রাখা হয়েছে তা জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চেতনা পরিপন্থী। এই বাজেট জুলাই গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিটকে ধারণ করে নাই।

বুধবার রাজধানীর বনানীস্থ দলীয় কার্যালয়ে প্রস্তাবিত ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটের উপর দলীয় পর্যালোচনা তুলে ধরেন ব্যারিস্টার শাহেদুল আজম।

 

দলের পক্ষে পর্যালোচনা তুলে ধরে ব্যারিস্টার শাহেদুল আজম বলেন, রাজনৈতিক সরকার না হওয়ায় বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সামনে দুর্নীতিগ্রস্ত রাঘব বোয়াল ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিগ্রহণ করার যে সুযোগ ছিল সেটি তারা কাজে লাগাচ্ছেন না। প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা। যা বর্তমান অর্থবছরের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৮.৮৮ শতাংশ বেশি। অথচ সরকার এখনো জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অসন্তোষ নিষ্পন্ন করতে পারে নাই। এই উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যমাত্রা সরকারের একটি দিবাস্বপ্ন বলেই আমরা মনে করি।

 

তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) -এর ঋণের শর্ত অনুযায়ী কর-জিডিপির অনুপাত উন্নীত করতে গিয়ে করদাতাদের উপর বাড়তি করের বোঝা চাপানো হয়েছে। করের আওতা না বাড়িয়ে বরং করহার বাড়ানো হয়েছে। এতে যারা ইতোমধ্যে কর দিচ্ছেন, তাদের উপরেও চাপ সৃষ্টি করবে। মে-২০২৫ সালে মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ১ শতাংশ, সেখানে প্রস্তাবিত বাজেটে ২০২৬ সালে মূল্যস্ফীতি ৬.৫ শতাংশে নেমে আসবে বলে যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তা অবাস্তব। ভর্তুকি মূল্যে টিসিবির মাধ্যমে বিভিন্ন খাদ্যপণ্য সরবরাহে সরকারি বরাদ্দ আগের তুলনায় ১.৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেলেও তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল বলে আমরা মনে করি।

 

এনডিএম বলছে, ঔদাসীন্য লক্ষ্য করা যায় শিক্ষা খাতে, যেখানে মানবসম্পদ উন্নয়নের প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ না থাকায় প্রতিটি চারজন তরুণের একজন আজ কর্মহীন। অথচ বাজেটে এর জন্য নেই কোনো কার্যকর কৌশল বা উদ্যোগ। এর পাশাপাশি সামাজিক সুরক্ষাবলয় প্রায় ভেঙেই পড়েছে- শহুরে দরিদ্র, জলবায়ু শরণার্থী কিংবা বেকার যুবকদের জন্য বাজেটে কোনো প্রতিশ্রুতি নেই, নেই কোনো স্বীকৃতি। আর জ্বালানি খাতে যে ভয়ানক পরিকল্পনাহীনতা আমরা দেখছি তা শুধু ১৪ শতাংশ পর্যন্ত বিদ্যুৎ ঘাটতি কারণ নয়, বরং এটি দেশের বৈদেশিক মুদ্রার ভাণ্ডারকেও চাপে ফেলেছে বিদেশী আমদানি নির্ভরতার কারণে। আধুনিক কৃষি বা জলবায়ু অভিযোজন নিয়ে নেই কোনো সুসংগঠিত রূপরেখা, নেই কৃষকের দুর্দশা লাঘবে আন্তরিকতার ছাপ।

 

ব্যারিস্টার শাহেদুল আজম বলেন, এই বাজেটের সবচেয়ে বড় এবং ক্ষমার অযোগ্য ব্যর্থতা হলো এটি একটি নির্বাচনের বাজেট নয়। জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থান কিসের জন্য হয়েছিল? জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য। অথচ এই বাজেটে নির্বাচন আয়োজন, নির্বাচন কমিশনের কার্যক্রম, ভোটার সচেতনতা কিংবা নির্বাচনকালীন আর্থিক কাঠামো তৈরির কোনো আভাস পর্যন্ত নেই। এই গভীর উপেক্ষা প্রমাণ করে দেয় এই বাজেট জনগণের জন্য নয়, এটি একটি কর্তৃত্ববাদী প্রশাসনের নিজস্ব স্বার্থ রক্ষার নীরব কৌশলমাত্র।

Related Post