জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজকে হত্যার উদ্দেশ্যে তার গুলশান বাসভবনে প্রবেশ করার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) গুলশান থানায় মামলাটি দায়ের করেন এনডিএমের দপ্তর সম্পাদক জাবেদুর রহমান জনি।
গুলশান থানার আদালতের সাধারণ নিবন্ধন শাখার কর্মকর্তা পুলিশের উপ-পরিদর্শক মোক্তার হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, এদিন মামলার এজহার ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াদুর রহমানের আদালতে উপস্থাপন করা হয়। আদালত তা গ্রহণ করে ৯ অক্টোবর প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দিন ধার্য করেন।
মামলার অপর আসামিরা হলেন- সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল আলম চৌধুরী, নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম, ব্যবসায়ী মোহাম্মাদ সাইফুল আলম মাসুদ ওরফে এস আলম, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাবেক তথ্য এবং সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মাদ এ আরাফাত, নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের ঢাকা মহানগর উত্তরের সহ-সভাপতি মোস্তফা আল নাফিজ, নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের কর্মী মো. নূর, সাবেক সড়ক পরিবহন এবং সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি রিয়াজ মাহমুদ, নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের ঢাকা মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক সাগর আহমেদ এবং আওয়ামী লীগ কর্মী শামীম।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পতিত স্বৈরাচারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্র-জনতা এবং ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক শক্তির আন্দোলনে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকেই এনডিএম চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজসহ ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনের সম্মুখসারির যোদ্ধাদের প্রতিবাদী কণ্ঠকে স্তব্দ করতে পরিকল্পনা করে আসছে।
উল্লেখ্য, ববি হাজ্জাজ গত বছর সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের বিচার চেয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল- ১ এর চীফ প্রসিকিউটরের নিকট অভিযোগ দায়ের করেন। এছাড়া তিনি গত বছর শেখ হাসিনার ভাগ্নি টিউলিপ সিদ্দিকসহ শেখ পরিবারের রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র সংক্রান্ত দুর্নীতি তদন্ত করতে দুদকের প্রতি নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন।
ববি হাজ্জাজ ধারবাহিকভাবে রাজপথে এবং টেলিভিশন টক-শোতে শেখ হাসিনার বিচার চেয়ে বক্তব্য দিয়ে আসছেন। এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা ও মহিবুল আলম চৌধুরী ফেসবুকে ববি হাজ্জাজের বিরুদ্ধে বিষেদাগার করেন। এছাড়া সিদ্দিকী নাজমুল আলম ভিডিও বার্তার মাধ্যমে ববি হাজ্জাজকে শায়েস্তা করার হুমকি দেন।
মামলার অভিযোগে বাদী উল্লেখ করেন, গত ৬ সেপ্টেম্বর আসামি মোস্তফা আল নাফিজ ও মো. নূর ববি হাজ্জাজকে হত্যার উদ্দেশ্যে তার গুলশান বাসভবনে প্রবেশ করেন। সন্দেহভাজন হিসেবে উপস্থিত নিরাপত্তারক্ষী কর্তৃক আটক হওয়ার পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামি নূর জানান, শেখ হাসিনার সরাসরি নির্দেশে মোস্তফা আল নাফিজ ববি হাজ্জাজকে ছুরিকাঘাতে বা সুবিধাজনক সময়ে তার গাড়িতে বোমা মেরে হত্যার আদেশ দিয়েছেন।
অভিযোগে আরো বলা হয়, নূর জানান-এই আদেশ বাস্তবায়নে অর্থায়ন করেছে আসামি এস আলম ও সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করেছেন ওবায়দুল কাদের, মহিবুল আলম চৌধুরি, আসাদুজ্জামান খান কামাল, জাহাঙ্গীর কবির নানক, মোহাম্মদ এ আরাফাত, রিয়াজ মাহমুদ, সাগর আহমেদ ও শামীম।
পতিত ফ্যাসিস্ট স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার নির্দেশে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএম চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজের ওপর হত্যাচেষ্টা চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি। এনডিএম মহাসচিব মোমিনুল আমিন লিখিত বক্তব্যে এ ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর ) দুপুরে ববি হাজ্জাজের গুলশানের বাসায় এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানানো হয়।
আজ সকাল আনুমানিক সাড়ে নয়টার দিকে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ঢাকা মহানগর সহ-সভাপতি মোস্তফা আল নাফিসের নির্দেশে ছাত্রলীগ কর্মী মো. নূর (২৫) ববি হাজ্জাজের গুলশান বাসভবনে প্রবেশের চেষ্টা করলে দেহরক্ষীরা তাকে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করে। জিজ্ঞাসাবাদে সে স্বীকার করে শেখ হাসিনার নির্দেশে বোমা হামলার মাধ্যমে ববি হাজ্জাজকে হত্যার পরিকল্পনায় এসেছিল। তার মোবাইল ফোন থেকে এ সংক্রান্ত তথ্য-প্রমাণও পাওয়া গেছে। পরে গুলশান থানা পুলিশ নূরকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।
এছাড়া গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে জানা যায়, বনানীতে অবস্থিত এনডিএম চেয়ারম্যান কার্যালয়ে বোমা সদৃশ বস্তু রাখা হয়েছে। বনানী থানা পুলিশ ইতোমধ্যেই কার্যালয় তল্লাশি চালিয়েছে এবং সেটিকে নজরদারির আওতায় রেখেছে।
লিখিত বক্তব্যে এনডিএম মহাসচিব বলেন, “ববি হাজ্জাজ শুধু জুলাই অভ্যুত্থানের সাহসী যোদ্ধাই নন, তিনি ছিলেন হাসিনা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে নির্ভীক কণ্ঠস্বর। খুনি হাসিনা তার প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর চিরতরে নিস্তব্ধ করার জন্য এই হত্যাচেষ্টা চালিয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, ২০১৩ সালে বিনাভোটের নির্বাচনের বিরুদ্ধে সাহসী অবস্থান নেয়ার কারণে র্যাব ববি হাজ্জাজকে গুম করে এবং পরবর্তীতে জোরপূর্বক লন্ডনে পাঠানো হয়। জুলাই আন্দোলনের সময় তিনি পুলিশের গুলিতে আহত হন এবং পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাসিনা ও আওয়ামী লীগের বিচার চেয়ে প্রথম অভিযোগ দায়ের করেন। তাঁর উদ্যোগেই হাসিনার ভাগ্নি টিউলিপ সিদ্দিকের দুর্নীতি বিশ্বব্যাপী প্রকাশিত হয় এবং সে মন্ত্রিত্ব হারায়।
এনডিএম মহাসচিব বলেন, “এ হত্যাচেষ্টা আসলে জুলাই আন্দোলনের ওপর আঘাত। এর আগে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নূর এবং জাগপার সভাপতি খন্দকার লুতফর রহমানের ওপরও হামলা হয়েছে। এগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং একই ষড়যন্ত্রের অংশ।”
তিনি সরকারের প্রতি দাবি জানান, আওয়ামী দোসরদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে কঠোর ক্র্যাকডাউন চালাতে হবে এবং প্রশাসনের ভেতরে যারা এখনো হাসিনার প্রতি আনুগত্য লালন করছে, তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে হবে।
মোমিনুল আমিন বলেন, “আমরা বিএনপির নেতৃত্বে সব গণতান্ত্রিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের আহ্বান জানাচ্ছি। আওয়ামী ফ্যাসিবাদ আবার ফিরে আসতে চাইলে কেউ রক্ষা পাবে না।”
তিনি ঘোষণা দেন, ববি হাজ্জাজকে হত্যাচেষ্টার প্রতিবাদে এনডিএম রাজপথে শক্ত আন্দোলন গড়ে তুলবে। আওয়ামী ফ্যাসিবাদকে চিরতরে নির্মূল না করা পর্যন্ত সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে বলে তিনি দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম) চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজের ওপর হত্যাচেষ্টা চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি। এনডিএম মহাসচিব মোমিনুল আমিন লিখিত বক্তব্যে এ ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
শনিবার দুপুরে ববি হাজ্জাজের গুলশানের বাসায় এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানানো হয়।
এনডিএম মহাসচিব মোমিনুল আমিন লিখিত বক্তব্যে বলেন, নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ঢাকা মহানগর সহ-সভাপতি মোস্তফা আল নাফিসের নির্দেশে ছাত্রলীগ কর্মী মো. নূর (২৫) ববি হাজ্জাজকে লক্ষ্য করে হামলার পরিকল্পনা নিয়ে তার বাসভবনে প্রবেশ করে। তবে দেহরক্ষীদের সন্দেহজনক আচরণে ধরা পড়ে নূর। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নূর স্বীকার করে, শেখ হাসিনার সরাসরি নির্দেশেই তাকে এ কাজে পাঠানো হয়েছে। হাজ্জাজের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ এবং প্রাথমিক সাক্ষাতের ছলে বাসায় প্রবেশ করাই ছিল তার মূল উদ্দেশ্য।
দেহরক্ষীরা নূরের মোবাইল ফোন পরীক্ষা করে এ দাবির আংশিক সত্যতা পায় বলে দাবি করেন এনডিএম মহাসচিব। পরে গুলশান থানা পুলিশ তাকে আটক করে। একইসঙ্গে গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে এনডিএম জানতে পারে, বনানীতে অবস্থিত এনডিএম কার্যালয়ে বোমা সদৃশ বস্তু রাখা হয়েছে।
এনডিএম কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি এ ঘটনাকে ‘ঘৃণ্য অপচেষ্টা’ হিসেবে নিন্দা জানিয়েছে। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ববি হাজ্জাজ শুধু জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বীর যোদ্ধাই নন, তিনি ছিলেন হাসিনা বিরোধী আন্দোলনের সাহসী কণ্ঠস্বর। এজন্য তাকে চিরতরে নিস্তব্ধ করতে এ হত্যাচেষ্টার নীলনকশা করা হয়েছে।
বক্তব্যে আরও উল্লেখ করা হয়, ২০১৩ সালে ববি হাজ্জাজকে র্যাব গুম করে পরে জোরপূর্বক লন্ডনে পাঠিয়েছিল হাসিনা সরকার। জুলাই আন্দোলনের সময় তিনি গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন পুলিশের গুলিতে। একইসঙ্গে হাসিনা ও আওয়ামী লীগের বিচার দাবিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রথম অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। এমনকি তার প্রচেষ্টাতেই হাসিনার ভাগনি টিউলিপ সিদ্দিক দুর্নীতির অভিযোগে মন্ত্রিত্ব হারান।
এনডিএম মহাসচিব অভিযোগ করেন, সাম্প্রতিক সময়ে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর এবং জাগপার সভাপতি খন্দকার লুৎফর রহমানের ওপর হামলার মতো ঘটনাগুলো বিচ্ছিন্ন নয়। জাতীয় নির্বাচনের আগে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে আওয়ামী দোসরদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি।
তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ববি হাজ্জাজকে হত্যাচেষ্টা মানে জুলাই আন্দোলনের ওপর আঘাত। আওয়ামী ফ্যাসিবাদকে নির্মূল না করা পর্যন্ত আমাদের সংগ্রাম চলবে। রাজপথে শক্ত প্রতিবাদ জানাবে এনডিএম।
ঢাকা: জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম) চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ উঠেছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে।
শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে নয়টার দিকে গুলশানে দলের চেয়ারম্যান হাজ্জাজের বাসভবনে এ ঘটনা ঘটে।
এনডিএম মহাসচিব মোমিনুল আমিন লিখিত বক্তব্যে বলেন, নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ঢাকা মহানগর সহ-সভাপতি মোস্তফা আল নাফিসের নির্দেশে ছাত্রলীগ কর্মী মো. নূর (২৫) ববি হাজ্জাজকে লক্ষ্য করে হামলার পরিকল্পনা নিয়ে তার বাসভবনে প্রবেশ করে। তবে দেহরক্ষীদের সন্দেহজনক আচরণে ধরা পড়ে নূর। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নূর স্বীকার করে, শেখ হাসিনার সরাসরি নির্দেশেই তাকে এ কাজে পাঠানো হয়েছে। হাজ্জাজের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ এবং প্রাথমিক সাক্ষাতের ছলে বাসায় প্রবেশ করাই ছিল তার মূল উদ্দেশ্য।
দেহরক্ষীরা নূরের মোবাইল ফোন পরীক্ষা করে এ দাবির আংশিক সত্যতা পায় বলে দাবি করেন এনডিএম মহাসচিব। পরে গুলশান থানা পুলিশ তাকে আটক করে। একইসঙ্গে গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে এনডিএম জানতে পারে, বনানীতে অবস্থিত এনডিএম কার্যালয়ে বোমা সদৃশ বস্তু রাখা হয়েছে।
এনডিএম কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি এ ঘটনাকে ‘ঘৃণ্য অপচেষ্টা’ হিসেবে নিন্দা জানিয়েছে। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ববি হাজ্জাজ শুধু জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বীর যোদ্ধাই নন, তিনি ছিলেন হাসিনা বিরোধী আন্দোলনের সাহসী কণ্ঠস্বর। এজন্য তাকে চিরতরে নিস্তব্ধ করতে এ হত্যাচেষ্টার নীলনকশা করা হয়েছে।
বক্তব্যে আরও উল্লেখ করা হয়, ২০১৩ সালে ববি হাজ্জাজকে র্যাব গুম করে পরে জোরপূর্বক লন্ডনে পাঠিয়েছিল হাসিনা সরকার। জুলাই আন্দোলনের সময় তিনি গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন পুলিশের গুলিতে। একইসঙ্গে হাসিনা ও আওয়ামী লীগের বিচার দাবিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রথম অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। এমনকি তার প্রচেষ্টাতেই হাসিনার ভাগনি টিউলিপ সিদ্দিক দুর্নীতির অভিযোগে মন্ত্রিত্ব হারান।
এনডিএম মহাসচিব অভিযোগ করেন, সাম্প্রতিক সময়ে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর এবং জাগপার সভাপতি খন্দকার লুৎফর রহমানের ওপর হামলার মতো ঘটনাগুলো বিচ্ছিন্ন নয়। জাতীয় নির্বাচনের আগে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে আওয়ামী দোসরদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি।
তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ববি হাজ্জাজকে হত্যাচেষ্টা মানে জুলাই আন্দোলনের ওপর আঘাত। আওয়ামী ফ্যাসিবাদকে নির্মূল না করা পর্যন্ত আমাদের সংগ্রাম চলবে। রাজপথে শক্ত প্রতিবাদ জানাবে এনডিএম।
জেএইচ
শেখ হাসিনার নির্দেশে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএম চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজের ওপর হত্যাচেষ্টা চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে এনডিএম-এর কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি।
আজ শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর ) দুপুরে ববি হাজ্জাজের গুলশানের বাসায় এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রেস ব্রিফিংয়ে এনডিএম মহাসচিব মোমিনুল আমিন লিখিত বক্তব্যে এ ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ঢাকা মহানগর সহ-সভাপতি মোস্তফা আল নাফিসের নির্দেশে ছাত্রলীগ কর্মী মো. নূর (২৫) ববি হাজ্জাজের গুলশান বাসভবনে প্রবেশের চেষ্টা করলে দেহরক্ষীরা তাকে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করে। জিজ্ঞাসাবাদে সে স্বীকার করে শেখ হাসিনার নির্দেশে বোমা হামলার মাধ্যমে ববি হাজ্জাজকে হত্যার পরিকল্পনায় এসেছিল। তার মোবাইল ফোন থেকে এ সংক্রান্ত তথ্য-প্রমাণও পাওয়া গেছে। পরে গুলশান থানা পুলিশ নূরকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।
গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে জানা যায়, বনানীতে অবস্থিত এনডিএম চেয়ারম্যান কার্যালয়ে বোমা সদৃশ বস্তু রাখা হয়েছে। বনানী থানা পুলিশ ইতোমধ্যেই কার্যালয় তল্লাশি চালিয়েছে এবং সেটিকে নজরদারির আওতায় রেখেছে।
লিখিত বক্তব্যে এনডিএম মহাসচিব বলেন, ববি হাজ্জাজ শুধু জুলাই অভ্যুত্থানের সাহসী যোদ্ধাই নন, তিনি ছিলেন হাসিনা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে নির্ভীক কণ্ঠস্বর। খুনি হাসিনা তার প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর চিরতরে নিস্তব্ধ করার জন্য এই হত্যাচেষ্টা চালিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ২০১৩ সালে বিনাভোটের নির্বাচনের বিরুদ্ধে সাহসী অবস্থান নেয়ার কারণে র্যাব ববি হাজ্জাজকে গুম করে এবং পরবর্তীতে জোরপূর্বক লন্ডনে পাঠানো হয়। জুলাই আন্দোলনের সময় তিনি পুলিশের গুলিতে আহত হন এবং পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাসিনা ও আওয়ামী লীগের বিচার চেয়ে প্রথম অভিযোগ দায়ের করেন। তাঁর উদ্যোগেই হাসিনার ভাগ্নি টিউলিপ সিদ্দিকের দুর্নীতি বিশ্বব্যাপী প্রকাশিত হয় এবং সে মন্ত্রিত্ব হারায়।
এনডিএম মহাসচিব বলেন, এ হত্যাচেষ্টা আসলে জুলাই আন্দোলনের ওপর আঘাত। এর আগে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নূর এবং জাগপার সভাপতি খন্দকার লুতফর রহমানের ওপরও হামলা হয়েছে। এগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং একই ষড়যন্ত্রের অংশ।
তিনি সরকারের প্রতি দাবি জানান, আওয়ামী দোসরদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে কঠোর ক্র্যাকডাউন চালাতে হবে এবং প্রশাসনের ভেতরে যারা এখনো হাসিনার প্রতি আনুগত্য লালন করছে, তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে হবে।
মোমিনুল আমিন বলেন, আমরা বিএনপির নেতৃত্বে সব গণতান্ত্রিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের আহ্বান জানাচ্ছি। আওয়ামী ফ্যাসিবাদ আবার ফিরে আসতে চাইলে কেউ রক্ষা পাবে না।
মোমিনুল আমিন ঘোষণা দেন, ববি হাজ্জাজকে হত্যাচেষ্টার প্রতিবাদে এনডিএম রাজপথে শক্ত আন্দোলন গড়ে তুলবে। আওয়ামী ফ্যাসিবাদকে চিরতরে নির্মূল না করা পর্যন্ত সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে বলে তিনি দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম) পার্টির মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলায় তিন বছর মেয়াদী কমিটি ঘোষনা করা হয়েছে। গতকাল রবিবার দলের মহাসচিব মোমিনুল আমিন স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে কমিটি ঘোষনার বিষটি নিশ্চিত করেছেন।
গাংনী উপজেলা কমিটিতে মহিদুল ইসলাম উজ্জল কে সভাপতি এবং আহসান হাবিব কে সাধারণ সম্পাদক মনোনীত করা হয়। এছাড়া ফরিদা ইয়াসমিন দিপা কে সিনিয়র সহ- সভাপতি, শহিদুল ইসলামকে সহ সভাপতি, ইয়াসাদ আজিম রনিকে সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক, মাহাফুজ্জামান কে যুগ্ম সম্পাদক, সাইফুল ইসলামকে সাংগঠনিক সম্পাদক, মোফাজ্জল হোসেনকে কোষাধ্যক্ষ মোখলেছুর রহমানকে দপ্তর সম্পাদক, তারিক মাহমুদকে প্রচার সম্পাদক করে কমিটি অনুমোদন দেয়া হয়। একই কমিটিতে নির্বাহী সদস্য হিসেবে আছেন, হামিদুল ইসলাম, রাসেল আহমেদ, সোহনুর রহমান সোহান, রেবেকা খাতুন, আসমা খাতুন, লিপি সরকার ও শরিফুল ইসলাম।
এনডিএম এর গাংনী উপজেলা কমিটিকে জেলা উপজেলার সকল শ্রেনী-পেশার মানুষ অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। সেই সাথে দলের নেতাকর্মীরা জনগণের পক্ষে কাজ করবে এমন প্রত্যাশা করেন জেলার সর্বসাধারণ।
মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা সড়কে আমঝুপি বাজার এলাকায় প্রাইভেটকার দুর্ঘটনায় দুইজন আহত হয়েছেন।
মঙ্গলবার রাত আড়াইটার দিকে দ্রুতগতির দুই প্রাইভেটকার রেসিং করতে গিয়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এতে দুটি দোকান মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রাইভেটকারটি দুমড়ে-মুচড়ে গিয়েছে।
আহতরা হলেন চুয়াডাঙ্গা জেলার সিনেমা হলপাড়ার হাফিজের ছেলে ফেরদৌস (১৯) ও পলাশপাড়ার ওহি (১৯)।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মেহেরপুর শহর থেকে চুয়াডাঙ্গাগামী দুটি প্রাইভেটকার প্রতিযোগিতা (রেসিং) করছিল। হঠাৎ আমঝুপি বাজারে একটি প্রাইভেটকার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে প্রথমে মার্সেল শোরুমের সাইনবোর্ডে ধাক্কা মারে, পরে লাইম কফি হাউজের দোকান ভেঙে পাশের বটগাছে সজোরে আঘাত হানে। এতে গাড়িটি দুমড়ে-মুচড়ে যায় এবং ভেতরে থাকা দুজন গুরুতর আহত হন।
দুর্ঘটনার পর অপর প্রাইভেটকারে থাকা যাত্রীরা আহতদের দ্রুত উদ্ধার করে নিয়ে যায়।
ঘটনাটি নিশ্চিত করে মেহেরপুর সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেখ মেজবাউদ্দিন আহমেদ বলেন, রাত গভীর হওয়ার কারণে ঘটনাস্থলে কাউকে পাওয়া যায়নি। গুরুতর আহত দুজনকে তাদের সঙ্গীরাই নিয়ে গেছে বলে জানা গেছে।
প্রাইভেটকারটি সম্পূর্ণ গুঁড়িয়ে গেছে এবং বর্তমানে এটি পুলিশ হেফাজতে রয়েছে। আশপাশের দোকানে থাকা সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হচ্ছে। ফুটেজ পর্যালোচনা করে দায়ীদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে।
জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ বলেছেন, নির্বাচন ছাড়া ‘সংস্কার’ আসলে কোনো সংস্কার নয়। বুধবার বিকেলে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে এ মন্তব্য করেন তিনি।
ববি হাজ্জাজ তার পোস্টে বলেন, ‘তারা আবার মিছিলে নেমেছে। এবার তাদের স্লোগান স্বাধীনতার জন্য নয়, বিলম্বের পক্ষে।
তারা বলছে, নির্বাচন নাকি সংস্কারের শত্রু। আর তাই জনগণকে আবারও অপেক্ষা করতে হবে নিজেদের নেতা বেছে নেওয়ার অধিকার ফিরে পেতে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা এই কণ্ঠস্বর চিনি। এরা সেই পুরনো রাজনৈতিক প্রাণী, যারা অন্ধকারে ক্ষমতা আঁকড়ে রাখতে চায়। যারা মুখে বিপ্লবের বুলি আওড়ায়, কিন্তু জনগণের জবাবদিহিতার ভয়ে কাঁপে। আজ তারা এনসিপি আর জামাতের পতাকার নিচে দাঁড়িয়ে দেশের মানুষকে বোঝাতে চাইছে— নির্বাচন চাইলে নাকি আপনি বিপ্লবের বিরোধী। এটি মিথ্যা। বিষাক্ত মিথ্যা। হাসিনার নয়-মাথাওয়ালা ফ্যাসিবাদী দানব যেমন মিথ্যা বলেছিল, ঠিক তেমনই।’
এনডিএম চেয়ারম্যান বলেন, দশকেরও বেশি সময় আমরা সেই দানবের বিরুদ্ধে লড়েছি—গলিতে, ক্যাম্পাসে, আদালতে, রাস্তায়, লাঠি, গুলি, কারাগারের সামনে দাঁড়িয়েছি, সঙ্গীদের দাফন করেছি। আমরা এই লড়াই এ কারণে করিনি, যাতে একদল নতুন, অঘোষিত ‘মুক্তিদাতা’ এসে স্বৈরশাসকের চেয়ারে বসে আমাদের আবার বলে—‘তোমরা এখনো প্রস্তুত নও।’
তিনি বলেন, এই বিপ্লব ছিল কোনো ব্যক্তি বা দলকে সরানোর জন্য নয়—এই নীতিকে ধ্বংস করার জন্য যে, জনগণের সম্মতি ছাড়া ক্ষমতা দখল করা যায়। আর আজ, এই গরম রাস্তায়, যারা ‘নির্বাচন ছাড়া সংস্কার’ চাইছে, তারা আসলে এক অগণতান্ত্রিক ক্ষমতাকে অন্য এক অগণতান্ত্রিক ক্ষমতায় বদলে দিতে চাইছে।
গণতন্ত্র টিকে থাকে জবাবদিহিতার ভিত্তিতে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, “নির্বাচনের মাধ্যমেই নেতা জনগণের কাছে জবাবদিহি করে। নির্বাচন ছাড়া ‘সংস্কার’ আসলে কোনো সংস্কার নয়—এটা কেবল একই প্রাসাদের রং বদল, যেখানে তালা সবসময় ভেতর থেকে লাগানো থাকে। জনতার নামে ভিড়ের শাসন আসলে কারো কাছে জবাবদিহি করে না। আজকের জনতা কাল অন্য স্লোগান দেয়, আর তখনই ক্ষমতা জনগণের হাত থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়।”
ববি হাজ্জাজ বলেন, ‘স্পষ্ট করে বলি—যারা আজ নির্বাচন ঠেকাতে চাইছে, তারা বিপ্লবের রক্ষক নয়; তারা কবর খুঁড়ছে, যেখানে জন্ম নেবে নতুন এক স্বৈরশাসন। স্বৈরশাসক নেই। এখনই আমাদের একবারের জন্য সুযোগ আছে—ক্ষমতা সত্যিকার অর্থে জনগণের হাতে ফিরিয়ে দেওয়ার। এই সুযোগ বিলম্ব সহ্য করবে না। যারা রাস্তায় নির্বাচনের দাবি ডুবিয়ে নিজেদের উচ্চাকাঙ্ক্ষার আওয়াজ তুলছে—তাদের কাছে আমরা দেশ তুলে দিতে পারি না।’
তিনি আরো বলেন, ‘এনসিপি আর জামায়াত চাইলে মিছিল করুক— কিন্তু দেশ যেন মনে রাখে, কে জনগণের অধিকার রক্ষা করেছে আর কে সেই অধিকার চুরি করতে চেয়েছে। আমাদের বিপ্লব তখনই শেষ হবে, যখন নয়-মাথাওয়ালা দানবের সব মাথা কেটে ফেলা হবে—আর মুকুট তার প্রকৃত মালিক, জনগণের হাতে ফিরবে।’
বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বসবেন যুগপৎ আন্দোলনের অন্যতম সহযোগী জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম)।
চেয়ারপাসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এই বৈঠক হবে। বৈঠকে তারেক রহমান লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হবেন।
বিএনপির লিয়াঁজো কমিটির পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। এনডিএম চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজের নেতৃত্বে বৈঠকে অংশ নেবেন মহাসচিব মোমিনুল আমিন, উচ্চ পরিষদ সদস্য হুমায়ূন পারভেজ খান, ভাইস চেয়ারম্যান ফারুক উজ জামান চৌধুরী, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার শাহেদুল আজম এবং দপ্তর সম্পাদক জাবেদুর রহমান জনি।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নির্বাচনের সময়সীমা ঘোষণার পর এটি এনডিএম-এর সঙ্গে তারেক রহমানের প্রথম আনুষ্ঠানিক বৈঠক। এই বৈঠকে চলমান যুগপৎ আন্দোলনের পরবর্তী করণীয়, রাজনৈতিক কৌশল ও নির্বাচনী প্রক্রিয়া নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হবে বলে জানা গেছে।
এর আগে গত মাসের তৃতীয় সপ্তাহে লন্ডনের একটি অভিজাত হোটেলে চলমান রাজনৈতিক সংকট ও জাতীয় ঐক্য গঠনের প্রেক্ষাপট নিয়ে তারেক রহমানের সঙ্গে ববি হাজ্জাজের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে যুগপৎ আন্দোলনের কাঠামো, নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যবদ্ধ কৌশল নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
জুলাই নায়কদের সাহস আর আত্মত্যাগকে স্মরণ করে এনডিএম'র চেয়ারম্যান ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ববি হাজ্জাজ বলেছেন, তারা আজ সর্বসম্মুখে নেই, কিন্তু তারাই সত্যিকারের নায়ক।
জুলাই-আগস্ট বিজয়ের প্রথম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ৫ আগস্ট মঙ্গলবার তেজগাঁওস্থ আলোকি মিলনায়তনে REV FEST 2025 (AN ODE TO UNSUNG HEROES) এর আয়োজন করে এনডিএম।
ববি হাজ্জাজ বলেন, এই উৎসব কেবল একটি অনুষ্ঠান নয়, বরং একটি শ্রদ্ধাঞ্জলি তাদের প্রতি, যারা নিঃস্বার্থভাবে লড়েছে, দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছে- আমাদের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে তাদের ত্যাগের স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। এই শিক্ষার্থীরা শুধুমাত্র দেশের বাইরে চলে যাওয়ার স্বপ্ন দেখেনি, বরং দেশের জন্য মাঠে দাঁড়িয়েছে, অদম্য সাহস নিয়ে লড়েছে। স্বৈরাচারের পতনে তাদের রক্ত, ঘাম ও আত্মত্যাগের ভূমিকা ছিল অপরিসীম।
এনডিএম'র চেয়ারম্যান বলেন, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তখন লড়েছে, যখন অন্যরা পিছিয়ে গেছে। তারা দেশপ্রেমের নতুন সংজ্ঞা সৃষ্টি করেছে—প্রমাণ করেছে, বাংলাদেশের তরুণরা দেশের মর্যাদা রক্ষায় জীবন উৎসর্গ করতেও দ্বিধা করে না।
আজ আমরা একত্রিত হয়েছি REV FEST 2025-এ, যা এই তরুণ বীরদের প্রতি কৃতজ্ঞতার প্রতীক। সকল প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য এই উৎসব, তাদের অবদানকে সম্মান জানানোর একটি ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা।
আগামী চার থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার নির্দেশনা দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার শনিবার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করার পর মানবজমিনকে এ তথ্য জানিয়েছেন। শনিবার বিকালে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ১৪ টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা।
মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন তিনি আগামী চার পাঁচ দিনের মধ্যে নির্বাচনের কর্মসূচি এবং তারিখ ঘোষণা করবেন। ন্যাশনাল পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ মানবজমিনকে বলেন, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা।
জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন বাংলাদেশ (এনডিএম) চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ মানবজমিনকে বলেন, আগামী ৫ই আগষ্টের মধ্যে নির্বাচনের বিষয়ে যাবতীয় সবকিছু প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে জানাবেন।
জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ এর মহাসচিব মুঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দি মানবজমিনকে বলেন, প্রধান উপদেষ্টা চার-পাঁচ দিনের মধ্যে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার করার কথা বলেছেন। আমরাও আমাদের দাবির বিষয় প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করেছি।
জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম)-এর চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ অভিযোগ করেছেন, পরাজিত আওয়ামী শক্তির আস্ফালন বলে দেয় দেশে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করছে আওয়ামী ফ্যাসিস্ট। এনসিপির অপরিপক্বতার কারণেই এমন ঘটনা ঘটেছে।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন তিনি। ববি হাজ্জাজ বলেন, ‘সরকারের চরম ব্যর্থতার কারণেই আওয়ামী সন্ত্রাসীরা এমন ধৃষ্টতা দেখানোর সাহস পেয়েছে। সর্ষের মধ্যে ভূত রেখে নতুন বাংলাদেশ গড়া যাবে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে শুদ্ধি অভিযান না চালানোয় পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে।’
তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘গোপালগঞ্জে যারা সন্ত্রাস চালাচ্ছে, তারা কীভাবে বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ায়? কাদের ছত্রছায়ায় তাদের এমন দাপট? প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে মিছিল করলেও তাদের এখনো আইনের আওতায় আনা হয়নি।’
বর্তমান নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নয়নে দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়ে চিরুনি অভিযান চালানোর আহ্বান জানান এনডিএম চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, প্রয়োজনে অবসরে যাওয়া সৎ পুলিশ কর্মকর্তাদের আবার কাজে লাগাতে হবে।
এ সময় ববি হাজ্জাজ বলেন, ‘আগামী রোজা শুরুর আগেই জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করতে হবে।’
জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক স্পষ্ট উচ্চারণের নাম। সমসাময়িক রাজনীতি, নির্বাচন, সংস্কার ও তরুণদের ভূমিকা নিয়ে তিনি বরাবরই সরব। ২০২৪ সালের জুলাইয়ের ঐতিহাসিক গণ-অভ্যুত্থানের পর তার রাজনৈতিক সক্রিয়তা ও ভাবনা নতুন মাত্রা পেয়েছে। তিনি শুধু রাজনীতির একজন কুশলী নন, বরং একজন চিন্তাশীল, তরুণবান্ধব ও সাহসী নেতৃত্বের প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠেছেন। নতুন বাংলাদেশে পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা, জবাবদিহির দাবি ও নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে তার ভাবনা তরুণ প্রজন্মের কাছে অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে। দেশের রাজনৈতিক গতিপথ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, শিক্ষাব্যবস্থা এবং তরুণ নেতৃত্ব নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন তিনি। দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস-এর পক্ষ থেকে সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সৈয়দ জুল আর্শিল।
এনডিএম-এর যাত্রা ৮ বছর পূর্ণ করলো। শুরুর প্রত্যাশাগুলোর কতটা বাস্তবায়ন হয়েছে?
আমরা যে প্রত্যাশা নিয়ে আমরা কাজ শুরু করেছিলাম, সেটার সবটুকু বাস্তবায়ন হয়েছে তা বলা যাবে না। এটা অবশ্যই সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। তবে জুলাইয়ে গণ-অভ্যুত্থানের পর আমরা মনে করি যে, অনেকদূর একটা বিশাল ধাপ আমরা এগিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছি। এনডিএম জন্ম নেয় একটা বিশ্বাসের ভিত্তিতে। বিশ্বাসটা হলো জবাবদিহিতামূলক গণতন্ত্র পুরো বাংলাদেশে বাস্তবায়ন করা। তো, আমরা ২০২৪ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত যে একটা স্বৈরশাসনে আবদ্ধ ছিলাম, যেখানে গণতন্ত্র ছিল না, জবাবদিহিতা ছিল না। সে জায়গা থেকে আমরা সকলে একত্রিতভাবে আন্দোলন করে এই গণ-অভ্যুত্থান ঘটাতে সক্ষম হলাম, আমার মনে হয় বিশাল একটা স্টেপ আমরা পার করেছি। তাই আমি বলব, আমরা যে কারণে আমাদের যাত্রা শুরু করেছি তার আশেপাশেও আমরা হয়ত যেতে পারিনি, তবে অনেক দূর আমরা আসতে সক্ষম হয়েছি।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তি চলছে। এক বছর আগে যে প্রত্যাশা ছিল নতুন বাংলাদেশকে নতুনভাবে দেখার, তার কতটা বাস্তবায়ন হয়েছে বলে মনে করেন?
গণ-অভ্যুত্থানে আমাদের সবার অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষা আছে। সবাই অনেক কষ্ট করেছি, তারপর বিজয়টা অর্জিত হয়েছে। তাই, এটা যেহেতু আমাদের অনেক কষ্টের অর্জন, সত্যিই আমাদের প্রত্যাশা অনেক বেশি থাকবে, এটা স্বাভাবিক। এর সাথে কিছু অবাস্তব প্রত্যাশাও থাকবে, এটাও স্বাভাবিক। তো, সেরকম শুধু আমার না, সব ধরনের মানুষেরই তেমন প্রত্যাশা ছিল। আমরা কিছু জায়গায় আশাহত হয়েছি। তবে বাস্তবিকভাবে অর্জন অনেক হয়েছে। জাতীয়তাভাবে অর্জন অনেক হয়েছে। আমাদের যত আশা-আকাঙ্ক্ষা ছিল সব পূরণ হয়েছে তা না, কিন্তু কিছু পূরণ হয়েছে। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো এই পূরণ কতটুকু হয়েছে তা না, গুরুত্বপূর্ণ হলো আমরা এই পূরণ করার যাত্রায় কতটুকু নিবেদিত হয়েছি। এটা যেহেতু হয়েছে, সেহেতু এটা আজ-কাল আমরা পূরণ করতে পারব।
আপনি একটি স্বনামধন্য প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, যেখানে আপনি ১৬ বছর ধরে সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন। জুলাই আন্দোলনের সময় যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অবরুদ্ধ ছিল, তখন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই রাজপথে সরব হয়ে আন্দোলনে নতুন মাত্রা এনেছিল। কিন্তু ৫ আগস্টের পর দেখা গেল তারা ক্লাসে ফিরে গেল, আর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীরা নানা সুবিধা ভোগ করল। এই বৈষম্য আপনি একজন শিক্ষক হিসেবে কীভাবে দেখেন?
বেশ কয়েকটি বিষয় আছে এখানে। একটা হলো যে, জুলাইয়ের ১৮, ১৯, ২০ এই তিনদিন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, এর সাথে স্কুল, কলেজ ছিল, মাদ্রাসা ছিল, তবে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে যদি নেমে না আসতো, তবে ১৭ তারিখ রাতেই এই আন্দোলনের ইতি টানা হতো৷ প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণরা যখন নেমে এসেছে, তাদের সাথেও আমি ছিলাম ১৭, ১৮, ১৯ তারিখে। এর আগেও আমরা রাজপথে ছিলাম তখন শিক্ষার্থীদের সাথে আমরা ছিলাম না। তো, ১৮, ১৯, ২০ যখন ছাত্রদের সাথে ছিলাম, তখন একটা জিনিস পরিষ্কার ছিল যে বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন একটি ধারা যোগ করে এই ১৮, ১৯, ২০ তারিখ। কারণ প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা একেকজন একেকভাবে কথাটা নিতে পারে। তবে যেকোনো সমাজে এলিট শ্রেণি সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ, এজন্যই এদের এলিট বলা হয়। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ছাত্রছাত্রী যারা আছেন, তাদের বড় একটা অংশ এলিট পরিবারের সন্তান। তো, এলিট পরিবারের সন্তানরা যখন স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাজপথে নেমে আসলো এবং তারপর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, তাদের উপর যখন আক্রমণ হলো, এইটা রাতারাতি পুরো আন্দোলনের মোড় ঘুরিয়ে দিলো৷ একটা হলো, অসংখ্য প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ-তরুণীরা রাজপথ দখল করতে সক্ষম হলো, আর আরেকটা হলো, তাদের উপর যখন আক্রমণ হলো, তাদের পরিবারবর্গও একরাতে সরকার-বিরোধী হয়ে গেল। আমি আগেও বলেছি, এসব পরিবারবর্গ সমাজের এলিট শ্রেণি, যেহেতু প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচ তারা বহন করতে পারে, অর্থনৈতিক সক্ষমতা তাদের আছে। এরপর সরকার ক্ষমতা ধরে রাখতে পারবে, এটা অসম্ভব হয়ে গেল। তারপর সময়ের ব্যাপার ছিল এবং ২/৩ সপ্তাহের মধ্যে সরকার চলেও গেল। তাই, এই ১৮, ১৯, ২০ পুরো আন্দোলনের মোড় ঘুরিয়ে দেয় এবং প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বড় অবদান রাখে স্বৈরাচার সরকার পতনে।
এখন আসি ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে। প্রথমত তারা তাদের ক্যাম্পাসে পড়াশোনায় ফিরে যায়। কারণ তরুণদের দায়িত্ব ওই জায়গায়। সরকার পরিচালনা করা তরুণদের দায়িত্ব না। কিন্তু আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের গঠনে অনেক বিশাল কিছু ভুল আমরা দেখি। তখন হয়ত এত বিশাল ভুল মনে হয়নি। কিন্তু, এটা এখন পরিষ্কার ভুল যে সরকার গঠনে তরুণদের অংশগ্রহণ। একাত্তরে কিন্তু আসলেই বিপ্লব হয়েছিল, জুলাই কিন্ত বিপ্লব না, এটা গণ-অভ্যুত্থান। একাত্তরে বিপ্লব হবার পর, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, বিজ্ঞ, অভিজ্ঞ যারা সরকারি পরিচালানায় ছিলেন তারা মিলেই কিন্ত সরকার গঠনের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। কোনো ছাত্রযোদ্ধা গিয়ে পার্লামেন্টে হঠাৎ করে বসেননি এবং নির্বাচন হয়েছিল। মানে ৭৩-এর নির্বাচন। আর ৭২ এ যে টেম্পোরারি সরকার দায়িত্ব নেয়, ৭০ এর নির্বাচন জয়ী কাঠামোগত সরকার। তো, এখানে তরুণরা কিন্তু সরকারে বসেন নাই। তাই এটা বিশাল একটা ভুল অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দ্বারা হয়েছে। যেটি এখনো তারা টেনে যাচ্ছে। এই যে আমরা একটার পর একটা দেখছি যে এক তরুণ উপদেষ্টা বন্দুকের সামঞ্জস্য নিয়ে এয়ারপোর্টে ধরা পরেন। এবং এটা পুরোপুরি অবৈধ। মানে কোনোভাবে তার লাইসেন্স থাকতে পারে না, বাংলাদেশের আইনে সম্ভবই না। আরেকজন তরুণ উপদেষ্টা বলছেন মব ভায়োলেন্স ভালো। রাস্তাঘাটে সম্মিলিতভাবে পেটাচ্ছেন, এটা ভালো। তারা তরুণ, তাদের আমি দোষও দিই না। আমি দোষ দিই যারা তাদেরকে সরকারে অংশ করেছেন। এই জায়গা থেকে আপনি বলতেই পারেন, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অনেক মূল্যায়ন হয়েছে। উল্টোদিকে, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণরা এর ভেতরে জড়াননি। হ্যাঁ, তাদেরকে কিছু জায়গায় অসম্মান করা হয়েছে, এটাও আমি দেখেছি এবং খুব দুঃখের সাথে দেখেছি। কিন্ত আমি বিশ্বাস করি, আগামীর ভবিষ্যৎ তাদের হাতেই রয়েছে।
প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রসঙ্গ যখন উঠেছে, তখন আরেকটি বিষয় জানতে চাই। আপনি কী মনে করেন—জাতীয় সংসদে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উঠে আসা শিক্ষার্থীরা আগামীতে অংশ নিতে পারবে? কারণ জুলাই আন্দোলনের বড় একটি সাফল্য তো এসেছিল তাদের নেতৃত্ব থেকেই।
আমি মনে করি, আপনি বিষয়টিকে কিছুটা সরলভাবে দেখছেন। প্রথমত, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশে তুলনামূলকভাবে নতুন একটি ধারণা। এর যাত্রা শুরু হয় মাত্র ১৯৯২ সালে। এরপর ’৯০ দশকের শেষদিকে গিয়ে শিক্ষার্থীরা ধীরে ধীরে ভর্তি হতে শুরু করে। অর্থাৎ, বড়জোর ২৫ বছরের ইতিহাস। প্রথমদিকে খুব অল্প সংখ্যক শিক্ষার্থী ছিল, পরে ধীরে ধীরে সেই সংখ্যা বেড়েছে। আর জাতীয় সংসদ এমন এক জায়গা যেখানে কেবল ডিগ্রি থাকলেই হয় না, প্রয়োজন রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা, মাঠের বাস্তবতা সম্পর্কে জ্ঞান এবং জনগণের আস্থা। এসব অর্জন করতে সময় লাগে, বয়স লাগে, ধারাবাহিকতা লাগে।
আমরা সর্বশেষ অংগ্রগ্রহণমূলক নির্বাচন দিখেছি ২০০৮-২০০৯ সালে। এরপর ১৬ বছর পেরিয়ে গেছে। সে সময় পর্যন্ত যারা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করেছে, তাদের সংখ্যা ছিল খুবই সীমিত। ফলে সংসদে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েটদের উপস্থিতি কম। এটা খুব স্বাভাবিক।
দ্বিতীয়ত, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা পড়ে, তাদের পরিবারের আর্থিক বিনিয়োগ অনেক বেশি থাকে। স্বভাবতই পরিবারগুলো চায় না তাদের সন্তানরা রাজনীতির মতো ঝুঁকিপূর্ণ পথে হেঁটে যাক। তারা পছন্দ করে নিরাপদ, সম্মানজনক পেশায় যাওয়া। যেমন কর্পোরেট, আইটি, অ্যাকাডেমিক বা উদ্যোক্তা খাতে। যার ফলে রাজনীতিতে তাদের অংশগ্রহণ কম।
তৃতীয়ত, আমাদের দেশে রাজনৈতিক দলগুলো ছাত্র রাজনীতিকে অনেকটা রিক্রুটমেন্ট প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ব্যবহার করে। এবং তারা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপরই বেশি ফোকাস করে। কেননা, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর পারিবারিক চাপ তুলনামূলকভাবে কম, তারা রাজনৈতিক কাজে যুক্ত হতে অপেক্ষাকৃত স্বাধীন।
প্রধান এই তিনটি কারণেই আপনি সংসদে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম দেখবেন। তবে সময় বদলাচ্ছে। এখনকার তরুণরা অনেক বেশি সচেতন, প্রযুক্তিসম্পৃক্ত এবং নেতৃত্বদানের মানসিকতাসম্পন্ন। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, ভবিষ্যতে আমরা আরও বেশি করে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উঠে আসা তরুণদের রাজনীতিতে, এমনকি সংসদেও দেখতে পাব।
বর্তমানে পিআর সিস্টেম নিয়ে খুব আলোচনা হচ্ছে। আমরা এটাও দেখছি যে পিআর সিস্টেম নিয়ে এনসিপি, জামায়াতে ইসলামী, গণঅধিকার পরিষদ, চরমোনাই ইত্যাদি রাজনৈতিক দলের একই বক্তব্য দিচ্ছে। এনডিএম-এর চেয়ারম্যান হিসেবে আপনার বার্তা কী?
আমাদের বার্তা স্পষ্ট—আমরা যখন নতুন গণতান্ত্রিক যাত্রা শুরু করেছি, তখন কিছু দলের আত্মকেন্দ্রিক স্বার্থের জন্য এই প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করা উচিত নয়। পিআর সিস্টেম নিয়ে আলোচনায় যাওয়ার আগে এর প্রকৃত রূপটি বোঝা দরকার। বাংলাদেশে এনডিএম-ই প্রথম দল হিসেবে অফিসিয়ালি পিআর সিস্টেম চালুর দাবি তোলে। তবে আমরা বলেছি, এটা হতে হবে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদে—এক কক্ষে পিআর, আরেক কক্ষে এফপিটিপি। এতে রাজনৈতিক ভারসাম্য রাখা সম্ভব। কিন্তু বর্তমানে যেসব দল সম্পূর্ণ পিআর চাইছে, তাদের উদ্দেশ্য গণতন্ত্র নয়, বরং দলীয় স্বার্থ। কারণ তারা বিএনপির সঙ্গে আসন ভাগাভাগির আলোচনায় প্রত্যাশিত সাফল্য পায়নি, এটা তো ওপেন সিক্রেট।
মার ধারণা, তারা এটা একটি নেগোসিয়েশনের কৌশল হিসেবে ব্যবহার করছে। কিন্তু এই কৌশল ক্ষতিকর, কারণ সম্পূর্ণ পিআর ব্যবস্থা গণতন্ত্রের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। পিআর মানে আপনি ব্যক্তিকে ভোট দেবেন না, দেবেন দলকে। এতে ব্যক্তিগত দায়বদ্ধতা উঠে যায়, জবাবদিহিতাহীন রাজনীতি জন্ম নেয়। আপনার এলাকায় কে সাংসদ তা আপনি জানবেন না, কারণ পিআর সিস্টেমে আসনভিত্তিক প্রতিনিধি থাকে না। বাংলাদেশের মতো বাস্তবতায়, এটি দলতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবে, গণতন্ত্র নয়। আমরা এই বিপজ্জনক দৃষ্টান্ত দেখেছি আগের সরকারের আমলে—যেখানে সংসদ সদস্যদের কোনো ক্ষমতা ছিল না, সবকিছু কেন্দ্রীভূত ছিল দলপ্রধানের হাতে। এতে স্থানীয় পর্যায়ে কোনো জবাবদিহিতা থাকে না। আরেকটি বাস্তব প্রশ্ন—গত কয়েকটি নির্বাচনে কেউই ৫০ শতাংশ ভোট পায়নি। এমনকি ৯১, ৯৬ বা ২০০১ সালে কেউ ৪০ শতাংশের বেশি ভোট পায়নি। তাহলে শুধুমাত্র দলীয় ভোটে কোনো দল এককভাবে সরকার গঠনই করতে পারবে না। সরকার গঠনই যদি না হয়, তাহলে দেশ চলবে কীভাবে?
এই দলগুলো বিষয়টি বোঝে। তারা জানে পূর্ণ পিআর বাস্তবসম্মত নয়। তবু তারা সেটার পেছনে ছুটছে শুধু তাদের ব্যর্থ জোট আলোচনা থেকে ক্ষোভ প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে। আমাদের দীর্ঘ ১০–১৫ বছরের যে সংগ্রাম, আন্দোলন, ত্যাগ—তার প্রেক্ষিতে গণতন্ত্রের এই নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছে। সেই অর্জনকে ছোট করে দেখানোর এই অপচেষ্টা অত্যন্ত দুঃখজনক।
আপনি সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপির বিভিন্ন সেমিনারে বক্তব্য দিয়ে তরুণদের উজ্জীবিত করছেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে রাজনৈতিক পরিচয়ের বাইরে গিয়ে, একজন মানুষ এবং দেশপ্রেমিক হিসেবে আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
এখানে দুইভাবে দেখার বিষয় আছে। আপনি বলছেন, রাজনীতির বাইরের সম্পর্ক। গত কয়েক বছরে তারেক রহমানের সাথে আমার যে সম্পর্ক, পুরোটাই রাজনৈতিক সম্পর্ক। উনার নেতৃত্বেই আমরা একত্রিতভাবে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে ছিলাম যেটাকে পরবর্তীতে আমরা এক দফা নাম দিই। এরপর থেকে আমরা একত্রিত আছি, কীভাবে আমরা নতুন বাংলাদেশ গড়বে। তাই, সেই জায়গা থেকে পরিচয়ের ভিত্তিটাই হলো রাজনীতি। আমাদের অনেক আলোচনা হয়, তবে প্রত্যেকটা আলোচনা রাজনীতির ভিত্তিতেই হয়। তবে গত কয়েক বছরে আমার সৌভাগ্য হয়েছে উনার সাথে অনেক আলোচনা করার, সেখান থেকে ব্যক্তিগতভাবে যদি আমি বলতে চাই, আমি দুটো জিনিসই বলব। আমার কাছে তারেক রহমান একজন সজ্জন ব্যক্তি, খুবই ওপেন মাইন্ডেড একটা মানুষ যিনি আসলেই বাংলাদেশকে ভালো কিছু দিতে চান, তারজন্য উনি নিজে কি চিন্তা করেন শুধু সেটা না, উনি সবার কাছ থেকে শুনতে চান, জানতে চান। আমার কাছে মনে হয় একজন লিডারের এটা অত্যন্ত মহৎ একটি গুণ।
বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা নিম্নমুখী এটা আমরা অবগত আছি। শিক্ষা ব্যবস্থায় আসলে সমস্যাটা কোথায় হয়েছিল? আর সমাধানটা কী সামনে?
সমস্যা তো আমরা অনেক জায়গায় অনেকভাবে আখ্যায়িত করতে পারি। তবে আমি সমাধানের দিকে যাই। বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার অবস্থা খুবই খারাপ। এটা সমাধানের জন্য বা উন্নয়নের জন্য একটা-দুটো জিনিসের দিকে তাকালে হবে না। আমাদের ঢালাওভাবে শিক্ষা ব্যবস্থাকে সাজাতে হবে। এবং এটা লোকাল প্রয়োজনীয়তা ভালোভাবে বুঝে সাজাতে হবে। গত সরকারের আমলে আমরা দেখেছি স্ক্যান্ডিনেভিয়ান স্টাইলে সাজাতে চায় শিক্ষা ব্যবস্থাকে। আমরা স্ক্যান্ডিনেভিয়ান না। লোকাল রিয়ালিটি অগ্রাহ্য করে আপনি যদি কিছু সাজাতে চেষ্টা করেন, সেটা কখনোই ভালো হতে পারে না। ওই জায়গা থেকে আমাদের লোকাল রিয়ালিটি বুঝে প্রাইমারি থেকে শুরু করে উচ্চশিক্ষা সব লেভেলের শিক্ষা ব্যবস্থাকে সাজাতে হবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের গত ১ বছরের পারফরম্যান্স আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
নম্বর দেওয়া খুব মুশকিল। আপনার সাথেই আলোচনা হয়েছিল যে আমাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা অনেক বেশি ছিল। আক্ষরিক অর্থেই বেশি ছিল যেটা তারা পারার কথা না। এর থেকে আরও বেটার হওয়া উচিত ছিল। যেমন: তরুণ উপদেষ্টাদের নিয়ে আমি ইতোমধ্যে আপনার সাথে আলোচনা করেছি। এমনও ঘটনা ঘটছে যে তরুণ উপদেষ্টারা যে দলটা বানিয়েছেন, এনসপি, সরকারের পক্ষ থেকে এনসিপিকে বাহবা জানানো হচ্ছে। এই জিনিসগুলো সাধুবাদ জানানোর জিনিস না। এদিকে আবার সরকারের ভেতর থেকে নির্বাচনকে বিলম্বিত করার প্রচেষ্টা আমরা দেখছি। উপদেষ্টার থেকে না এটা, সরকারের ভেতর বাকি আরও অনেকে আছে যারা এই অপচেষ্টা করছেন। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়নের জন্য এখনও এই সরকার কিছুই করেন নাই। অনেক কিছুই করতে পারেন নাই। সেটা তাদের দোষ না, হয়ত পারতেনও না। আবার অনেক জিনিস পারতেন, কিন্তু করেন নাই। আইন শৃঙ্খলা বা সামাজিক অবস্থা, আবার একটু স্বাচ্ছন্দ্যের জায়গায় নিয়ে আসা, এটা অনেক কিছু পারেননি, অনেক কিছু করেননি। এভাবে অনেক তাদের দুর্বলতা আছে। আবার সব সরকারেরই দুর্বলতা থাকে। সে জায়গা থেকে কিছু বিষয় অবশ্যই ক্ষমার যোগ্য। তবে নির্বাচন প্রলম্বিত করলে এ ধরনের সমস্যাগুলো আরও ঘনীভূত হবে। তখন কিন্ত আমরা এই ব্যাপারগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবো না। তাই আপাতত আমি বলছি, যতদূর গেছে ঠিকঠাক গেছে, সামনে তাড়াতাড়ি নির্বাচন না হলে তাদের রেটিং আসলেই অবনতি ঘটবে।
সোমবার (৭ জুলাই) দুপুরে নির্বাচন ভবনে সিইসির সঙ্গে বৈঠক শেষে দলটির চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ এসব জানান।
সংসদীয় আসন পুনবিন্যাস, নির্বাচনী আচরণবিধি, প্রার্থীর অযোগ্যতাসহ ৪ দাবিতে কমিশন লিখিত প্রস্তাব জানিয়েছে দলটির নেতারা। এসময় দলটির পক্ষ থেকে নির্বাচনী আচরণবিধিতে ব্যয়সীমা ২৫ লাখ থেকে ৪০ লাখে উন্নীত করণের দাবি জানানো হয়।
ববি হাজ্জাজ বলেন, ‘আমরা চারটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। এক্ষেত্রে আগামী ৬০ দিনের মধ্যে সীমানা নির্ধারণ চেয়েছি। নির্বাচনী ব্যয়সীমা ২৫ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪০ লাখ টাকায় উত্তীর্ণ করতে বলেছি। এছাড়া পিভিসি পোস্টার বাতিলের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে বলেছি। নিবন্ধন স্থগিত রয়েছে এমন দলের নেতারা যেন ভোটে দাঁড়াতে না পারে ইসি যেন সেই ব্যবস্থা নেয়, সে কথাও বলেছি।’
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যখন ২৫ লাখ টাকা ব্যয়সীমা করা হয়েছিল, সেই সময়ের বাজারদর আর এখন নেই। সবকিছুর দাম বেড়েছে। তারপরও পোস্টার তুলে দিতে চাইছে। তাই ব্যয়সীমা বাড়িয়ে ৪০ লাখ টাকার কথা বলা হয়েছে। এছাড়া বিলবোর্ডের কথা বলা হয়েছে প্রচারের জন্য। বিলবোর্ড ভাড়া করতে হলে ৪০ লাখ টাকার মধ্যেও ব্যয় সীমাবদ্ধ রাখা সম্ভব নয়।
একইদিন বাংলাদেশ আমজনগণ পার্টি আনারস প্রতীকসহ নিবন্ধনের দাবি জানিয়ে ৫৩ বছরের মধ্যে সেরা নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানান।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের সব কমিটির নেতাদের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা দাবি জানিয়েছেন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট (এনডিএম)।
সোমবার (০৭ জুলাই) প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএ নাসির উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠকে এ দাবি জানিয়েছে দলটি।
এনডিএম চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বলেন, সরকারের নির্বাহী আদেশে যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা বা নিবন্ধন স্থগিত থাকা রাজনৈতিক সংগঠনের কেন্দ্রীয় বা জেলা বা উপজেলা পর্যায়ের কমিটির সদস্য এবং অঙ্গ সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির কোনো সদস্যকে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য অযোগ্য ঘোষণা করতে হবে।
তিনি বলেন, নিবন্ধন স্থগিত বলতে আমরা আওয়ামী লীগকেই বুঝিয়েছি। আইন যেহেতু হয়েছে, সে আইনের স্পিরিট মানতে হবে। তাই ইসি যেন তাদের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা ব্যবস্থা খুঁজে বের করে।
তিনি বলেন, বৈঠকে আমরা ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ব্যক্তিগত ঋণের জামিনদারদের ক্ষেত্রে ঋণের মূল আবেদনকারী খেলাপি হলে মনোনয়নপত্র দাখিলের পূর্বে ঋণ পরিশোধ স্লিপ প্রদান সাপেক্ষে প্রার্থীকে নির্বাচনের যোগ্য বিবেচিত করার কথা বলেছি।
ববি হাজ্জাজ আরও বলেন, বিদ্যমান আইনের ৭ ধারা অনুযায়ী সংসদীয় আসন পুনর্বিন্যাস সংক্রান্ত নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। সুতরাং আগামী ৬০ দিনের মধ্যে এসংক্রান্ত আবেদনগুলো নিষ্পত্তি করে গেজেট প্রকাশ করতে হবে। আসন পুনর্বিন্যাসের ক্ষেত্রে জেলার মোট আসন অপরিবর্তিত রাখতে হবে। এক জেলায় অবস্থিত সংসদীয় আসন অন্য জেলায় স্থানান্তর করা যাবে না, যেখানে সম্ভব উপজেলাকে অবিভাজিত রাখতে হবে।
আসন পুনর্বিন্যাসের ক্ষেত্রে জনসংখ্যা, বিভিন্ন আসনের মধ্যে ভোটার সংখ্যার তারতম্য, ভৌগলিক সীমারেখা এবং যাতায়ত ব্যবস্থা, জনপ্রত্যাশা ইত্যাদি বিষয়কে প্রাধান্য দিতে হবে।
নির্বাচনী আচরণবিধি নিয়ে এনডিএম চেয়ারম্যান বলেন, নির্বাচন কমিশনের ব্যবস্থাপনায় সংসদীয় আসনের নির্দিষ্ট স্থানে প্রতিদ্বন্দ্বী সব প্রার্থীর ছবি সংবলিত বিলবোর্ড স্থাপন করতে হবে। নির্বাচন কমিশনের ব্যবস্থাপনায় প্রতিদ্বন্দ্বী সব প্রার্থীর উপস্থিতিতে জনবহুল স্থানে অন্তত একটি পরিচিতি সভার আয়োজন করতে হবে। রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় প্রার্থীর সঙ্গে ১০ জন সমর্থককে যাওয়ার অনুমতি দিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ভোটের প্রচারে প্রস্তাবিত পিভিসি ব্যানার ব্যবহার না করা সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে হবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কোনো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল কোনো প্রার্থীর ব্যক্তিগত চরিত্র হনন এবং ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে কোনো প্রচারণা চালাতে পারবে না বলে আচরণবিধিতে উল্লেখ করতে হবে। নির্বাচনী ব্যয়সীমা ৪০ লাখ টাকায় উন্নীত করতে হবে।
ববি হাজ্জাজ বলেন, আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ ধরে নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশ তৈরির লক্ষ্যে নিবন্ধিত সব রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে সংলাপ আয়োজন করতে হবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের জাতীয় নির্বাচনের তফসিল এবং তারিখ ঘোষণা সংক্রান্ত আলোচনা হয়ে থাকলে তা দ্রুত জাতিকে জানাতে হবে।
আগামী ৬০ দিনের মধ্যে সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ চান ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক মুভমেন্টের (এনডিএম) চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ।
সোমবার (০৭ জুলাই) প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের কাছে এমন দাবির কথা জানান।
ববি হাজ্জাজ বলেন, আমরা চারটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। আগামী ৬০ দিনের মধ্যে সীমানা নির্ধারণ চেয়েছি। নির্বাচনী ব্যয়সীমা ২৫ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪০ লাখ টাকায় উত্তীর্ণ করতে বলেছি। পিভিসি পোস্টার বাতিলের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে হবে। এ ছাড়া নিবন্ধন স্থগিত রয়েছে, এমন দলের নেতারা যেন ভোটে দাঁড়াতে না পারেন, ইসি যেন সেই ব্যবস্থা নেয়।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যখন ২৫ লাখ টাকা ব্যয়সীমা করা হয়েছিল, সেই বাজারদর আর এখন নেই। সবকিছুর দাম বেড়েছে। তার ওপর পোস্টার তুলে দিতে চাচ্ছে। তাই ব্যয়সীমা বাড়িয়ে ৪০ লাখ টাকার কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া বিলবোর্ডের কথা বলেছে প্রচারের জন্য। বিলবোর্ড ভাড়া করতে হলে ৪০ লাখ টাকার মধ্যেও ব্যয় সীমাবদ্ধ রাখা সম্ভব নয়।
নিবন্ধন স্থগিত রয়েছে এমন দলের বিষয়ে তিনি আরও বলেন, নিবন্ধন স্থগিত থাকা দলের কোনো সদস্যের ভোটে দাঁড়ানোর বিষয়টা যেন অযোগ্য ঘোষণা করা হয়। নাম লুকিয়ে যেন সেই দলের কোনো নেতা ভোটে না আসতে পারে, তার ব্যবস্থা করার কথা বলেছি।
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে ববি হাজ্জাজ বলেন, নিষিদ্ধ সংগঠন যখন বলছি তখন আওয়ামী লীগের কথা বলছি। কেন্দ্র, জেলা বা উপজেলা কমিটিতেও যারা পদে ছিলেন, এমন নেতাদের কথা আমরা বলেছি, যেন তাদের ভোটে অংশ নেওয়ার সুযোগ না দেওয়া হয়।
তিনি আরও বলেন, আইনের ঊর্ধ্বে কেউ না। যখন আইন পাস হয়, তখন সেটার স্পিরিট মানতে হবে। নিবন্ধন স্থগিতাদেশ যদি না ওঠে তাহলে তারা ভোটে অংশ নিতে পারবে না।
এনডিএম প্রধান বলেন, ভোটের পরিবেশ সৃষ্টির বিষয়ে বলেছি, ফেব্রুয়ারিকে ধরে যেন ইসি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ আয়োজন করে। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তারিখ নিয়ে আলোচনা হলে তা জানানো। তবে সিইসি বলেছেন, কোনো নির্দেশনা সরকারের তরফ থেকে আসেনি। তারা জুনের মধ্যে ভোটের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।
তিনি বলেন, কখন নির্বাচন হবে তা যদি সিইসি পরিষ্কার করে জানান তবে জনগণের ধারণা পরিষ্কার হবে।
ইইউডি/এমজেএফ
❝২০২৪ এর গণঅভ্যুত্থান❞-এ আওয়ামী ফ্যাসিস্ট দ্বারা দেশের বিভিন্ন স্থানে ছাত্র-জনতার উপর চালানো গণহত্যায় আহত, নিহত এবং তাঁদের পরিবারবর্গের জন্য এক বিশেষ দোয়া মাহফিল করেছে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএম।
মঙ্গলবার (১ জুলাই) রাজধানীর মালিবাগ মোড়ে দলের মহানগর কার্যালয়-এ দোয়া মাহফিলে সভাপতিত্ব করেন এনডিএম উচ্চ পরিষদের সদস্য হুমায়ূন পারভেজ খান এবং সঞ্চালনা করেন ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি মাসুদ রানা জুয়েল। মাহফিলে আরও উপস্থিত ছিলেন, দলের ভাইস চেয়ারম্যান ফারুক-উজ-জামান চৌধুরী, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম, দপ্তর সম্পাদক জাবেদুর রহমান জনি, নির্বাহী সদস্য নুর উল্লাহ, যুব আন্দোলনের সভাপতি আদনান সানিসহ দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ।
উচ্চ পরিষদ সদস্য হুমায়ূন পারভেজ খান বলেন, ‘আমরা এই দোয়া মাহফিলের মাধ্যমে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি তাঁদের, যাঁরা স্বৈরাচারের দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে শহীদ হয়েছেন। জুলাই- আগস্টে যেসব নিরীহ নাগরিক স্বৈরাচার ও ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের গুন্ডাবাহিনী ও পুলিশবাহিনী দ্বারা সহিংসতার শিকার হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন বা আহত হয়েছেন, তাঁদের আত্মত্যাগ জাতি কখনো ভুলবে না। আমরা তাঁদের রূহের মাগফিরাত কামনা করছি এবং তাঁদের পরিবারবর্গের জন্য ধৈর্য ও শান্তি কামনা করি। পাশাপাশি, আমরা জোরালোভাবে দাবি জানাচ্ছি’।
তিনি বলেন, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নৃশংসতা এবং ছাত্র-জনতা হত্যাকান্ডে জড়িত সকলের দ্রুত ও নিরপেক্ষ বিচার হোক এবং ফ্যাসিস্ট হাসিনা এবং তার সকল দোসর ও পৃষ্ঠপোষকদের আইনের আওতায় আনা হোক। এনডিএম বিশ্বাস করে, বিচারহীনতার অবসান ঘটিয়ে শান্তি, ন্যায়বিচার ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠাই হবে শহীদদের প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা’।
মাহফিলে দোয়া পরিচালনা করেন ছাত্র আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক মুফতি শেখ মুহাম্মদ ফরিদ।